উৎপল দাস ::
কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গাদের জিহাদের জন্য সংগঠিত করছে ইসলামী ছাত্রশিবির। যুদ্ধাপরাধের নামে জামায়াতে নেতাদের হত্যা বিচার ও যাবরজীবন কারাদন্ড জামায়াত নেতা দেলওয়ার হোসেন সাইদীর মুক্তির জন্য এই জিহাদ করতে রোহিঙ্গা যুবকদের সংগঠিত করা হচ্ছে। উখিয়ার জামতলী ও হাকিম পাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এই কর্মকান্ড চালানো হচ্ছে। একটি অবৈধ এনজিও ব্যানারে ২ শতাধিক কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় প্রশিক্ষিত শিবির ক্যাডার রোহিঙ্গাদের সংগঠিত করার কাজ করছে। এরি মধ্যে এই দুইটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রায় ১২শ রোহিঙ্গাকে শিবিরের দাওয়াতি প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এই রোহিঙ্গা যুবকদের দিয়ে ২০১২ সালের রামুর বৌদ্ধ মন্দিরে হামলা ও ২০১৩ সালের কক্সবাজার শহরে তান্ডবের মতো বড় ধরনের নাশকতার ছক আঁকছে ছাত্র শিবির।
গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যে জানা গেছে, উখিয়ার ফালংখালী ইউনিয়নের জামতলী ও হাকিম পাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প অনেকটাই নির্জন এলাকা। এই ক্যাম্প দুটিতে স্মল কাইন্ডনেস বাংলাদেশ এসকেবি নামের একটি নিষিদ্ধ এনজিও মাধ্যমে দাওয়াতি ও সদস্য সংগ্রহের কার্যক্রম চালাচ্ছে ছাত্র শিবির। এই কার্যক্রমে যুক্ত করা হয়েছে ছাত্র শিবিরের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ও দক্ষ দুই শতাধিক সাবেক ও বর্তমান ছাত্রনেতাকে। যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসির দন্ডপাপ্ত মীর কাশেম আলীর পরিবারের অনেক সদস্যও ও ঘনিষ্ট ব্যাক্তিরা এই কার্যক্রমে জড়িত আছে।
সূত্রটি জানিয়েছে, রোহিঙ্গাদের শিবিরের দাওয়াতি কার্যক্রম চালানোর নেতৃত্বে রয়েছেন জামায়াত শিবিরের শিশু কিশোর সংগঠন ফুলকুড়ীর কেন্দ্রীয় প্রধান পরিচালক এ টি এম আব্দুল গফুর নাসির। এ টি এম নাসির চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্র শিবিরের সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তিনি যুদ্ধাপরাদের দায়ে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত রাজাকার মীর কাশেম আলীর ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
স্মল কাইন্ড বাংলাদেশ এসকেবির ব্যানারে এ টি এম নাসিরের নেতৃত্বে ফুলকুড়ীর ঢাকা মহানগরী শাখার পরিচালক জিয়াউর রহমান, কক্সবাজার জেলা ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি তৈয়ব উল্লাহ, সাবেক সভাপতি আজিজুর রহমান সহ ২ শতাধিক শিবিরের প্রশিক্ষিত নেতারা রোহিঙ্গাদের সংগঠিত করছে। তারা ক্যাম্পের ভোতরে যুদ্ধাপরাধের দায়ে দন্ডপাপ্ত দেলওয়ার হোসেন সাঈদির বিভিন্ন বক্তব্য ও ওয়াজ শুনিয়ে রোহিঙ্গাদের সরকার বিরোধী উসকানি দিচ্ছে। দেলওয়ার হোসেন সাঈদীকে মুক্তির জন্য নতুন জিহাদ শুরু প্রস্তুতি নিতে রোহিঙ্গা যুবকদের সংগঠিত করছে।
এই ব্যাপারে জানতে চাইলে ছাত্র শিবিরের দাওয়াতি কার্যক্রমের প্রধান এ টি এম নাসির নিজের রাজনৈতিক পরিচয় স্বীকার করছেন। তিনি নিজে ৪ বছর ফুলকুড়ীর কেন্দ্রিয় প্রধান পরিচালক ও ছাত্রশিবিরের চট্টগ্রাম মহানগরের ২ দায়িত্বশীল পদে ছিলেন। সাংগঠনিক ভাবে মীর কাশেম আলীর সাথে যোগাযেগ থাকলেও ব্যক্তিগত ভাবে তার কোন সম্পর্ক নেই বলে তিনি দাবি করেন।
জামতলী ও হাকিম পাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে স্মল কাইন্ডনেস বাংলাদেশে কার্যক্রম তার নেতৃত্বে পরিচালিত হচ্ছে বলে জানান এ টি এম নাসির। এই সংস্থার সাথে রোহিঙ্গা ক্যাম্প দুটিতে শিবিরের অনেক সাবেক নেতাও চাকরী করছে বলে তিনি স্বীকার করছেন। তবে তার সংস্থা এসকেবির কোন কর্মকর্তাই রোহিঙ্গাদের কোন ধরনের উসকানি দিচ্ছেনা বলে তিনি দাবি করেন।
এসকেবির কার্যক্রম সরকার নিষিদ্ধ করা নিয়ে শিবিরের কেন্দ্রীয় এই নেতা জানান, জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই ও সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই ভুল তথ্যের ভিত্তিতে এসকেবির বিরুদ্ধে রিপোর্ট দিয়েছে। তবে জেলা প্রশাসনের পক্ষে তাদের কার্যক্রম চালানোর কোন নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়নি বলে তিনি দাবি করেন।
এই ব্যাপারে উখিয়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ নিকারুজ্জমান চানিয়েছেন, এসকেবির রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কাজ করার কোন বৈধ অনুমতি নেই। তাদের কাছে এনজিও ব্যুরো ছাড়পত্রও নেই। কিসের ভিত্তিতে তারা কাজ করছে সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ ইকবাল হোসাইন জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কোন সংগঠন দেশ বা সরকার বিরোদী কাজ করলে তা কঠোর ভাবে দমন করা হবে। রোহিঙ্গাদের যাতে উসকানি দিয়ে দেশের ভেতরে আইন শৃঙ্খলার অবনতি করতে না পারে সে জন্য গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। সুত্র: ভোরের পাতা
পাঠকের মতামত